বেশ কয়েকমাস ধরেই আমেরিকা যাওয়ার চিন্তাভাবনা। আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে কাছের প্রচুর বন্ধুবান্ধব থাকে। এতোগুলো জায়গায় যেতে গেলে ঠিকঠাক ফতুর হয়ে যাবো। আর মাসের পর মাস সময় গেলেও ঘুরে শেষ করা যাবে না। এক আমেরিকাই তো দুনিয়ার অর্ধেক!
যা-ই হোক, প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনের বন্ধু শোয়েব সপরিবারে থাকে বোস্টনে। নিউইয়র্কের কাছে হওয়ায় তার কাছে যাবোই যাবো, এমনই পরিকল্পনা।
আরও দুয়েকজন কাছের বন্ধু যখন জানলো আমেরিকা ট্যুরের প্ল্যান করছি তখন সবারই বায়না, দেখা করতেই হবে। বাসায় যেতেই হবে।
বন্ধু ও সাবেক কলিগ মিলিকে কথা প্রসঙ্গে জানালাম, আমেরিকা আসতে পারি।
বলো কি! কবে!?
আমি বললাম, এখনও জানি না। ঠিক হলে তোমাকে জানাবো।
জানাবো মানে কি!? আমেরিকা আসবা আর আমার সঙ্গে দেখা করবা না! মাথা নষ্ট!? আমার সঙ্গে দেখা না করলে ঠ্যাং ভাইঙ্গা ফেলমু।
শুনে মুচকি মুচকি হাসলাম আর ভাবলাম বন্ধুত্বের দাবি তো এমনই হওয়া উচিত!
বন্ধু শোয়েবের সঙ্গে আবার আলোচনা করলাম, দোস্ত কি করি! এই এই কাহিনি…
শোয়েবের জিজ্ঞাসা, কোথায় থাকে তোর বন্ধু?
বললাম, রেনোতে, নেভাডায়।
সে বলে, ব্যাডা। কস কি যাবি না মানে! গ্র্যান্ডক্যানিয়ন, লেক তাহো, লাসভেগাস মিস করা কি ঠিক হবে? তোর অবশ্যই যাওয়া উচিত।
মিলির পিটায় ঠ্যাং হারানোর ভয় আর শোয়েবের প্রলোভন… ফ্লাইট খোঁজা শুরু করলাম নেভাডার উদ্দেশে।
ঠিক কি কারণে জানি না সরাসরি কোনো ফ্লাইট পাচ্ছি না। হয়তো আমার কাঙ্ক্ষিত তারিখে ফ্লাইট অপারেশন নেই অথবা বাজেট এয়ারলাইন্স হিসেবে দূরত্বও একটা কারণ।
অনেক ঘেঁটেঘুঁটে একটা পেলাম আমেরিকান এয়ারলাইন্সের। টেক্সাসের ডালাসে গিয়ে আমাকে খালাস করবে, মানে ট্রানজিট ;)। তিনঘণ্টার যাত্রাবিরতি। তারপর সেখান থেকে নেভাডার রেনোতে।
রেনো থেকে ফিরবো শোয়েবের কাছে, বোস্টনে। একই কারবার। ডিরেক্ট ফ্লাইট নেই। একমাত্র অপশন রেনো টু লাসভেগাস, লাসভেগাস টু বোস্টন।
দেখলাম, সকাল সকাল লাসভেগাসে পৌঁছে সারাদিন সেই পাপের শহরে ঘুরেটুরে সন্ধ্যার আগেই সুবোধ বালকের মতো বোস্টনের ফ্লাইট ধরলে সবকূল রক্ষা হয়। এই বয়সে এসে লাসভেগাসে একা একা রাতের বেলায় ঘোরাঘুরি আর মানায় না।
একদিকে বন্ধুর প্রতি বন্ধুর আবদার, সঙ্গে ঠ্যাং ভেঙে দেওয়ার হুমকি, আছে এতো এতো সুন্দর জায়গা দেখার লোভও… এমন হলে সিদ্ধান্ত না পাল্টানোর আর কোনো সুযোগ থাকে না।
এদিকে আমার আসার কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই বাজার করা শুরু করেছে মিলি। শুনে আমার রীতিমতো বিরক্তই লাগা শুরু হলো। তা বলাতে সে বললো, আসবা আমার বাসায়। একটা কথা বলারও সুযোগ নাই। আমি যা বলবো, তা-ই শুনতে হবে। বললাম, অবশ্যই ম্যাডাম!
একবার বলেছিলাম, স্যান ফ্রান্সিসকো কি যাওয়া যাবে? সে বললো, দেখি কী করা যায়।
আসা-যাওয়া মিলিয়ে প্রায় ১০০০ কিলোমিটার। মিলি তার এক জ্যামাইকান কলিগকে বলে রেখেছে ব্যাকআপ ড্রাইভার হিসেবে। মিলি নিজেও চালাবে। তার মেয়ে নাবিলাও ড্রাইভ করে। আমিও আমার লাইসেন্সটা ইন্টারন্যাশনাল করিয়ে নিয়েছি। চার ড্রাইভার মিলে এক গাড়ি চালালে নিশ্চয় গাড়ি ভালো চলবে…
এতো এতো ব্যাপারস্যাপার… সবমিলিয়ে তাই আসা-যাওয়ার প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার পথের টিকিট কেটেই ফেললাম।
আর ঠ্যাং বাঁচাতে লাসভেগাস হয়েই আমাকে বোস্টন ফিরতে হবে…