ড. আতিউর, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বুড়ো তদন্তকারীরা

Bangladesh Bank

Bangladesh Bank Source: The Daily Star

বিভিন্ন জায়গায় মাসে কোটি কোটি টাকা সম্মানী দিয়ে আইটি কনসালটেন্ট রাখা হচ্ছে। সরলে তো তাদের সরে যাওয়া উচিত। ড. আতিউরের তো দোষ তেমন ছিল না। তিনি শুধু ‘সময়মতো’ মন্ত্রণালয়কে জানান নি, এই ছিল তাঁর দোষ! জানালে মাল সাহেব কী করতে পারতেন? তাদের কি সেই সক্ষমতা ছিল, নগদে টাকা ফিরিয়ে আনার? বরং একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গভর্নরের যা-যা করার দরকার ছিল তিনি তা-ই করেছেন। বাড়ির বৌ চুরি যাবার পর পাড়াপ্রতিবেশীর (মিডিয়া) কাছে জানাজানি হবার আগে, মানসম্মান খোয়া যাবার আগেই বৌ উদ্ধারে মনোনিবেশ করেছেন। কিন্তু কালিমা তাকে ছাড়ে নি, যে যেভাবে পারছে, বলছে। মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী, (অ)রাজনীতিজীবী — সবাই। আমি নিশ্চিত, তিনি শিক্ষক না হয়ে পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ হলে তার ভাগ্যে এমনটা ঘটতো না।
 
এ রকম যদি সরে যেতে হয় তাহলে তো প্রতিটি অধিদপ্তরের, প্রতিটি দপ্তরের বড় কর্মকর্তাদের সরে যাওয়া উচিত। যেমন : নারায়ণগঞ্জে যে সেভেন মার্ডার হলো তাতে যে র‌্যাবের অতি ভদ্র কর্মকর্তারা জড়িত তা তো পানির মতো পরিষ্কার। তবে র‌্যাবের ডিজিকে তো সরানো হলো না। এমনকি এখন পর্যন্ত দোষীদের বিচারও করা হলো না। সেখানে মন্ত্রীর জামাতা আছেন বলে কি এমনটা হয়েছে?
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা কীভাবে কোথায় গেলো, কে চুরি করলো তার তদন্ত না করেই ড. আতিউরকে সরিয়ে দেওয়া হলো। একজন ব্যক্তিকে অনর্থক ব্যর্থতার দায়ভার কাঁধে নিতে হলো। দায়িত্ব দেওয়া হলো সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে। অথচ তাঁর ব্যাংক থেকেই তো হলমার্ককে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা দেওয়া হলো। তিনি কি সেটার বন্দোবস্ত এখনও পুরোপুরি করতে পেরেছেন?
 
কোনোকিছু হলেই বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ডেকে আনা হয়, আর বুড়া লোকদের হাতে দেওয়া হয় তদন্তের দায়িত্ব। মনে করা হয়, তারা খুব অভিজ্ঞ! কিন্তু বাস্তবতা তো সবসময় তা নয়। পৃথিবীর কোনোদেশেই এমনটা করা হয় বলে আমার ধারণা নেই। বরং তারা খোঁজে এফিশিয়েন্ট লোক বা প্রতিষ্ঠান। আমাদের দেশেও বহু ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান আছে যারা বিশ্বমানের। তবে অনর্থক কেন বিদেশপ্রীতি? আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীরাও কিন্তু গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফট, অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানে সুনামের সঙ্গে কাজ করছে।
 
বুড়া কোনো লোককে দায়িত্ব দিলেন ভীষণ অভিজ্ঞ আর ভারী প্রোফাইল দেখে কিন্তু আইটি সম্পর্কে তাঁর ন্যূনতম জ্ঞানও নেই! এমনকি নিজের ইমেইল অ্যাকাউন্টটাও নিজে হ্যান্ডেল করতে পারে না! তাহলে লাভের লাভ কী হলো? বরং বয়স বা ভারী প্রোফাইল নয়, নামীদামি বিদেশি প্রতিষ্ঠান নয়, দেশপ্রেম আছে এমন দেশি প্রতিষ্ঠান আর আইটিতে তুখোঁড় জ্ঞান আছে এমন তরুণদের সম্পৃক্ত করুন তদন্তে। এতে ভালো ফল আসবে বলে মনে হয়। ভারতীয় দাদারা তাদের স্বার্থ দেখবে, এটাই স্বাভাবিক। আমেরিকানরাও আমেরিকানদের। সুতরাং নিজেদের মধ্য থেকে যোগ্যদের খুঁজে বের করে প্রতিটি সেক্টরে তাদের কাজে লাগান, যদি সত্যিই টেকসই উন্নয়ন চান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *