বাংলাদেশের একজন মানুষও সুস্থ না!

sick patientবাংলাদেশের একজন মানুষও সুস্থ না! — হয় এ কথা সত্য, নয় বাংলাদেশের চিকিৎসক ও সাংবাদিকরা মিথ্যা! এই কথা কেন বলছি আসুন তা দেখে নিই। বিবিসির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হলো, ‘বাংলাদেশে প্রতি সাত জনে একজন কিডনি রোগী’। সূত্র এখানে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের জরিপ অনুযায়ী দেশটির প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, প্রতি বছর শুধুমাত্র তাদের হাসপাতালেই গড়ে ৫০ হাজার রোগীর চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

প্রতি সাতজনের একজন কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে মোট জনসংখ্যার কত ভাগ অসুস্থ? হিসাবের ভার আপনার ওপরই থাকলো।

বিবিসির আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ কানের সমস্যায় ভুগছে’। সূত্র এখানে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় পরিচালিত এক জরিপের ফল অনুযায়ী বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে কানে কম শোনা রোগে ভুগছে। এর মধ্যে অন্তত দশ ভাগ মানুষ হিয়ারিং এইড বা যন্ত্রের সহযোগিতা ছাড়া প্রায় অচল। আর বধিরতায় ভুগছে এক দশমিক তিন শতাংশ শিশু। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. কামরুল হাসান তরফদার বলেন, শহর ও গ্রাম সব জায়গাতেই শ্রবণ সম্পর্কিত সমস্যার অন্যতম বড় কারণ হলো শব্দ দূষণ। ধর্মীয়, রাজনৈতিক নানা কিছু, আবার কনসার্ট এগুলোতে ব্যাপকভাবে অনুষ্ঠান স্থলের বাইরেও মাইকের ব্যবহার করা হয় যেগুলো অত্যন্ত ক্ষতিকর।

প্রতি তিনজনের একজন কর্ণরোগে আক্রান্ত হলে মোট জনসংখ্যার কত ভাগ অসুস্থ? হিসাবের ভার আপনার ওপরই থাকলো!

এদিকে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের মতে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ৭১ লাখ! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে পৃথিবীতে প্রায় ৩৪ কোটি ৭০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছে। ২০১২ সালে ডায়াবেটিসের কারণে ১৫ লাখ মানুষ মারা যায়। ডায়াবেটিসে মৃত্যুর শতকরা ৮০ ভাগ হচ্ছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে। আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০৩০ সাল নাগাদ মানুষের মৃত্যুর সপ্তম কারণ হবে ডায়াবেটিস। (সূত্র এখানে)

অন্যদিকে বছর দুয়েক আগে দেওয়া ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি)’র হিসাব অনুযায়ী; দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১২ থেকে ১৪ লাখ। আর প্রতিবছর ১ লাখ ২২ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং এর মধ্যে ৯১ হাজার রোগী মারা যান। সূত্র এখানে

সমকাল  তাদের এক প্রতিবেদনে বলছে, বর্তমানে দেশে এক কোটি ২০ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত। (সূত্র : এখানে)

বাংলাদেশ প্রতিদিন বলছে, দেশে সোয়া দুই কোটির বেশি মানসিক রোগী। (সূত্র : এখানে)। পত্রিকাটির আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হৃদরোগীর প্রকৃত সংখ্যা কত, তা নিয়ে নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যেভাবে হৃদরোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং এ কারণে মৃত্যু হচ্ছে তাতে বলা যেতে পারে, এটি শীঘ্রই মহামারীতে রূপ নিতে যাচ্ছে। (সূত্র : এখানে)

জনসংখ্যার শতকরা ২০ ভাগ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে কত মানুষ অসুস্থ? হিসাবের ভার আপনার ওপরই থাকলো!

এনটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হলো : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানজির আহম্মদ তুষার জানান, বাংলাদেশে এই রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ। (সূত্র : এখানে)

এভাবে বর্ণনা দিতে গেলে লেখাটাই শেষ করা যাবে না। সর্বশেষ কালের কণ্ঠকে একটু উদ্ধৃত করি। পত্রিকাটি বলছে, ‘দেশে এমন পরিবার পাওয়া কঠিন যেখানে কারো না কারো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও ক্যান্সারের মতো রোগ কিংবা কিডনি অথবা লিভারের সমস্যা নেই। অনেক পরিবারে এমন একাধিক রোগেও আক্রান্ত আছেন কেউ কেউ, যার সব কটিই অসংক্রামক। এই অসংক্রামক রোগ দেশে মারাত্মক রূপ নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এমন উদ্বেগজনক বিবরণ দিয়েছেন। পরিসংখ্যানেও মিলছে এর প্রমাণ। দেশে বছরে যে সাড়ে আট লাখের মতো মানুষের মৃত্যু ঘটে তার মধ্যে ৬২ শতাংশই মারা যায় এসব অসংক্রামক রোগে। আর যাঁরা বেঁচে থাকেন তাঁরাও কেবল নিজের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতাই হারান না, এর সঙ্গে হারিয়ে ফেলেন দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে নিজের কার্যকর অংশগ্রহণের ক্ষমতাও। উল্টো তাঁরা দেশ, সমাজ ও পরিবারের জন্য এক রকম বোঝা হয়ে দাঁড়ান।’ (সূত্র : এখানে)

উপরের প্রতিবেদনগুলির কিয়দাংশও যদি সত্য হয়, তাহলে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ আমি-আপনি কি তা একবারও ভেবে দেখেছি?

তবে আমিও বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই কমবেশি কোনো না কোনো রোগে সত্যিই আক্রান্ত, অসুস্থ। আর এর সবচেয়ে বড় কারণ ‘ভেজাল’। ভেজালের ভিড়ে আপনি আসলই খুঁজে পাবেন না। এমন কোনো খাবার নেই যাতে ভেজাল মেশানো হয় না। এমনকিছু নেই যা ভেজালের উর্দ্ধে। এমনকি জীবনরক্ষাকারী ওষুধে পর্যন্ত ভেজাল! তাই পত্রিকার রিপোর্টগুলি পড়ে একবাক্যে উচ্চারণ করতে চাই, ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও সুস্থ না!’ আর এই অসুস্থতা থেকে মুক্তি খোঁজার এখনই সময়।

মাহমুদ মনি
জার্মানি
৭ এপ্রিল, ২০১৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *