জীবনে কোনোদিন হয়তো ভাতও খায় নাই, পান্তাভাত তো দূরের কথা! মাটির সানকি তো চোখেও দেখে নাই কোনোদিন। অথচ মাম্মি-ড্যাডির পোলাপানগুলির কেবল বৈশাখ এলেই মাটির সানকিতে ইলিশ-পান্তা খেতে মন চায়! তাই একহালি ইলিশের দাম হাতিরপুল বাজারে এবার এক লাখ টাকা হয়ে গেল! কোন্ ভদ্রলোক সেটা কিনেছেন এবং তার আয়ের উৎস কী, সে বিষয়ে দুদক তো একটু কাজ করতেই পারে।
আমার ধারণা, ইলিশ-পান্তা কালচারের জন্য আমার মতো হাভাতে সাংবাদিক আর মিডিয়াই দায়ী। প্রথম আলো’র অনেক ভালো দিক থাকলেও নকশা’র মতো পাতার মাধ্যমে চালানো তাদের ‘মিডিয়াবাণিজ্য’ই ইলিশ-পান্তা টাইপ বিষয়গুলির জন্য শতভাগ দায়ী।
আজ যদি আমার একটা বড় মিডিয়া থাকতো, এবং আমার বিশ্বাস, সেখানে কোনো নামীদামি সেলেব্রিটি বা কন্ট্রিবিউটরকে দিয়ে ফিচারটাইপ কিছু একটা ছাপতে পারতাম… বিষয়টা হতে পারতো… “পহেলা বৈশাখে পাঙ্গাস মাছের ঝোল আর গরম ভাত — এক নতুন ট্রেন্ড!”, তাহলে আজ থেকে ১২-১৪ বছর পর সত্যিই তা একটা ট্রেন্ডে দাঁড়িয়ে যেতো। কারণ হুজুগে বাঙালি বলে একটা কথা আছে!
শফিক রেহমানের হাত ধরে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে যে ভালোবাসা দিবসের যাত্রা শুরু হয় তাও এখন একটা ট্রেন্ড! ওইদিন কোটি কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়, গিফ্ট বিক্রি হয়। আর যদি এখন কেউ ‘ঘৃণা দিবসে’র যাত্রা শুরু করেন তাহলে ১৫-২০ বছর পর তা সত্যিই একটা ট্রেন্ডে দাঁড়িয়ে যাবে। কারণ হুজুগে বাঙালি বলে একটা কথা আছে!
এই যে অনেকেই, এমনকি আমার ধারণা, শতকরা ৯৫ ভাগ বাঙালি (এমনকি আমিও জানি না, কারণ আমার দরকার নেই) বাংলা সনের তারিখও ঠিকমতো বলতে পারবে না কিন্তু বাংলা নববর্ষ উদযাপনের জন্য ঠিকই কামড়াকামড়ি শুরু করে দেয়!
ইলিশের বাজারে এখন ধুম, নতুন কাপড়ের বাজারও গরম। আমার বিশ্বাস, এখন যদি কেউ ‘বাংলা বর্ষবিদায়’ অনুষ্ঠানের যাত্রা শুরু করেন তাহলে কিছু বছর পরে তাও একটা ট্রেন্ড হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে। বাংলা বর্ষবিদায় অনুষ্ঠানে সবাই কান্না করবে, শোকগীত গাইবে… সাদা-কালো জামা পরবে… তাহলে কিছু বছর পর গ্লিসারিন-কর্পুরজাতীয় জিনিসের কদর বেড়ে যাবে। চোখমুছার জন্য নরম তুলতুলে রুমালেরও দাম হবে আকাশচুম্বি। কদর বাড়বে সাদা-কালো বিভিন্ন জামা-কাপড়ের। এখন যেমনটা লাল-হলুদের। কারণ হুজুগে বাঙালি বলে একটা কথা আছে না!
এই যে রোজার দিন এলে বেগুনি নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়, বেগুনের কেজি হয় চারশ’ টাকা, তার জন্যও তো অামাদের হুজুগই দায়ী। মিডিয়া প্রচার করে “বেগুনের যত গুণ” টাইপ ফিচার। আমার একটা মিডিয়া হলে অামি চালু করে দিতাম নতুন একটা ট্রেন্ড। রোজায় আলু’নি টাইপ কিছু একটা। প্রচারণা চালাতাম “জীবনে আলো ছড়াবে আলু”-জাতীয় বিষয় নিয়ে। এবং আমি নিশ্চিত ১২-১৪ বছর পর তাও একটা ট্রেন্ডে (আমাদের কালচার! খুব সহজেই আমাদের কালচার তৈরি হয়ে যায়! মাত্র ১৫-২০ বছরেই!) দাঁড়িয়ে যাবে।
কারণ হুজুগে বাঙালি বলে একটা কথা আছে!
মাহমুদ মনি
জার্মানি
৯ এপ্রিল, ২০১৬