মোশাররফ করিমের বক্তব্য ও আমাদের ধর্মীয় অনুভূতি!

Mosharraf Karimমোশাররফ করিমকে নিয়ে ক’দিন ধরে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। তিনি আসলে কী বলেছিলেন তা এতদিন দেখার সুযোগ হয় নি। আপনারা হয়তো এরই মধ্যে সব দেখেছেন ও শুনেছেন। তারপরও পুরো অনুষ্ঠানই এখানে আছে। সেই সঙ্গে আছে একজন ‘সাচ্চা মুসলমানে’র অমৃত বয়ান!

চ্যানেল টুয়েন্টিফোরে ‘জাগো বাংলাদেশ’ নামে যে অনুষ্ঠানটি হয়েছিল তার পুরোটা কাল রাতে সময় নিয়ে দেখলাম। কিন্তু একবারও মনে হয় নি যে তাতে তিনি একটুও খারাপকিছু বলেছেন। অথচ সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ধরনের ফেনা উঠছে। এমনকি টিভি চ্যানেলগুলোতে এ নিয়ে টকশোও হচ্ছে। মোশাররফ করিম হয়তো বিনয়বশত হয়ে ক্ষমাও চেয়েছেন। অথচ ক্ষমা চাওয়ার মতো তিনি কিছুই বলেন নি।

জনাব করিম কী বলেছিলেন তার চুম্বক অংশ আছে ভিডিওর প্রথমাংশে। আর পুরো অনুষ্ঠানটি আছে ভিডিওর শেষাংশে। তাহলে মাঝখানে আছে কী? মাঝখানে আছে আমাদের একজন ‘সাচ্চা মুসলমানে’র ভিডিও। লোকটার ভাষা-ব্যবহার দেখলেই বুঝবেন তিনি কতটা নীচ। অথচ একটা ধর্মের নামে তিনি বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি কি আসলে ইসলামের মতো একটা ধর্মকে প্রতিনিধিত্ব করেন? ওই লোকটার কথা না হয় বাদই দিলাম। আরও যে লাখো-কোটি ‘মুসল্লি’ আছে তাদের বক্তব্যকে বাদ দেবেন কীভাবে? অনেকেই মনে মনে ওই লোকটাকে সমর্থন করেন সোওয়াবের আশায়। ফেসবুকে-ইউটিউবে ওই লোকটার ভিডিওর নিচের কমেন্টগুলো দেখলেই বুঝা যায় বাংলাদেশের মুসলমানের প্রতিকৃতি।

আমি ওই লোকটার দোষ দিই না, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হলে এমনই হয়। কিন্তু আমার দুঃখ লাগে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়া লোকজনের মন্তব্যও যখন ওই লোকের বক্তব্যকে ছাড়িয়ে যায়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন তেমন শিক্ষকও আছেন যিনি সৌদিআরব-প্রবাসী ওই ব্যক্তির চেয়ে জঘন্য মনমানসিকতার অধিকারী কিংবা তার বক্তব্যের প্রতিনিধিত্ব করেন তথাকথিত ধর্মের লেবাসধারী হয়ে। আমার বন্ধুতালিকায়ও সৌদিআরব-প্রবাসী ওই লোকটার মতো অসংখ্য লোক আছেন। শুধু ফেসবুকেই না, বাস্তবজীবনেও এমন লোকের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু কেন? আমাদের কি মগজ নেই? ন্যূনতম বিচার-বুদ্ধি নেই?

যতটা পড়েছি, দেখেছি আর শুনেছি সত্তর-আশির দশকেও ধর্মীয় ইস্যুতে এমন ফেনা তুলতো না বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। তাহলে ২০১৮ সালে এসে এ কেমন বাংলাদেশ?

আমার‌ আশ্চর্য লাগে, একটা নারী ধর্ষিত হলে কোনো প্রতিবাদ করে না এই শুয়োরের দল। যখন পাঁচ বছরের ফুটফুটে একটা শিশুকে ধর্ষণের পর লাশ টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেয় তখনও তাদের ধর্মীয় অনভূতিতে এতটুকু আঘাত লাগে না! একটা টুঁ শব্দ পর্যন্ত করে না মানুষ নামের ওই পশুর দল।

কোন্ পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *