বাংলাদেশে মোবাইল ফোন চালু হওয়ার প্রায় ২০ বছর পর সরকার কিছু একটা করতে যাচ্ছে! জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া আর সিমকার্ড ব্যবহার করা যাবে না — একযুগ ধরে মানুষ এমন কথা শুনে আসছে। অবশেষে সরকার একটা ‘কঠিন সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে! একটি বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে সর্বোচ্চ ২০টি সিম রাখতে পারবেন একজন মুঠোফোন ব্যবহারকারী!
সিম কি বাংলাদেশের মানুষ খাবেও নাকি? এগুলো তো আর খাওয়ার শিম না। তাহলে একটা লোকের সর্বোচ্চ ২০টা ‘সিম’ (SIM)-এর কী দরকার?
সরকারের মাথা যে কে চালায় তা আসলে বোধহয় কেউই জানে না। কয়দিন পরপর ঠুসঠাস সোশ্যালমিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয় নানান অজুহাতে। আর এখানে একেকজনকে ২০টা করে সিম কোন্ কারণে চালাতে দেওয়া হবে, তা বুঝি না। তাও আবার ব্যক্তিপর্যায়ের ব্যবহারকারীদের জন্য!
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমগুলি বলছে, “একটি বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে সর্বোচ্চ ২০টি সিম রাখতে পারবেন একজন মুঠোফোন ব্যবহারকারী। এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের এক পর্যালোচনা সভায় এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এ সভায় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘একটি এনআইডির বিপরীতে বা ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০টি সিম রাখার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।’”
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সামনে বাণিজ্যমেলা! আর সরকার বাণিজ্যমেলায় সিমের ছাড় দিয়েছে। আসুন আসুন… মাত্র একটি এনআইডি কার্ড দিন, আর নিয়ে নিন ২০টি সিম! বাংলাদেশের সবকিছুতেই যে বাড়াবাড়ি, তা বুঝা যায় সরকারের এমন পাগলামি দেখে। একজন ২০টি পর্যন্ত সিম ব্যবহার করতে পারবে, বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর যে-কোনো দেশের মানুষ এমনটা শুনলে হেসে গড়াগড়ি খাবে।
অন্যদিকে বিটিআরসির সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে চালু থাকা মোট সিমের সংখ্যা ১৩ কোটি ১৯ লাখ ৯৬ হাজার। অফিসিয়ালি ১৪ কোটি মানুষের দেশে প্রায় সোয়া ১৩ কোটি অ্যাক্টিভ সিম! বাহ্, সত্যিই দেশ এগিয়ে গেছে! আমাদের দেশের মানুষ যে কত কথা বলে তার প্রমাণও এটি।
যা-ই হোক, এসব করে কোনোদিনও সমস্যার কোনো সমাধান হবে না, যতদিন না পর্যন্ত খোলাবাজারে কিংবা ফুটপাতে মুড়িমুড়কির মতো সিম বিক্রি বন্ধ হবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গিয়ে দেখুন, একটা সিম কিনতে কী বেগ পেতে হয়, আর সেই সিম চালু হতে কয়দিন সময় লাগে! একবার নয়দিনের সফরে নয়াদিল্লি গিয়েছিলাম। সেবার সিম চালু হয়েছিল দেশে ফিরে আসার দেড়দিন আগে, অর্থাৎ সাতদিনের মাথায়! পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও একটা সিম চালু করা এত্তো সহজ না। আর বাংলাদেশে এসব হয় হরহামেশা, কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই। এখন আবার এক এনআইডিতে মিলবে ২০টি করে সিম কার্ড! আমি নিশ্চিত, এবার বাংলাদেশে মরা মানুষের একেকটি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) দাম হবে আকাশচুম্বী!!!
