জার্মানিতে অপার সম্ভাবনা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের

Germany Universityবিদেশে পড়াশোনার কথা ভাবলেই অনেকের মাথায় আসে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যের নাম। কিন্তু ওই দুটি দেশে উচ্চহারের টিউশন ফি’র কারণে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানের জন্য তা সোনার হরিণ। সেই দিক থেকে জার্মানিতে পড়াশোনার খরচ বাংলাদেশের চেয়েও সস্তা! কারণ জার্মানিতে শিক্ষার্থীদের কোনো টিউশন ফি দিতে হয় না। তবে অনেকেই সঠিক দিকনির্দেশনা ও তথ্যের অভাবে জার্মানিতে পড়তে যেতে পারেন না। কেউ কেউ এজেন্সি বা ‘দালাল’-এর খপ্পড়ে পড়ে হন সর্বস্বান্ত।

বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষার মান এবং স্বল্প খরচের কারণে জার্মানি হয়ে উঠেছে আর্ন্তজাতিক শিক্ষার্থীদের ডেস্টিনেশন। থাকা-খাওয়াবাবদ ২৫০ থেকে ৩০০ ইউরোর মতো খরচ হয় একজন শিক্ষার্থীর, যা বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়ায় ২২ হাজার থেকে ২৬ হাজার টাকার মতো। আর সপ্তাহে মাত্র দুদিন একটি খ-কালীন চাকরি করে অনায়াসেই ৪০০ থেকে ৪৫০ ইউরো আয় করা সম্ভব।

জার্মানিতে শিক্ষার্থী হিসেবে পড়তে আসার প্রথম ধাপটি হচ্ছে বিষয় নির্বাচন করা। কারণ দেশটির ৪৫০টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৭ হাজার কোর্স রয়েছে। তাই সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হয় এমন একটি কোর্স খুঁজে পেতে সময় দিতে হবে। তবে আইটিসহ অন্যান্য প্রযুক্তিনির্ভর বিষয়ের চাহিদা জার্মানিতে বেশি। এসব বিষয়ে পড়তে আসলে পরে জার্মানিতে চাকরিসহ স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ অনেকখানি প্রসারিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাস করেছেন খান রাহাত আল রাফি। এরপর তিনি দ্বিতীয় দফায় মাস্টার্স কোর্স করতে ভর্তি হয়েছেন হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটিতে। রাহাত বলেন, জার্মানির পড়াশোনার মান বিশ্বের উন্নত যে-কোন দেশের মতো। এখানে পড়তে আসতে চাইলে প্রথমেই ডাড, এরাসমুসমুন্ডুস বা অন্যান্য স্কলারশিপের খোঁজ নেওয়া উচিত। স্কলারশিপ না পেলেও টিউশন ফি লাগে না। সেই ক্ষেত্রে আট হাজার ইউরোর মতো ব্যাংকে ব্লক করতে হয়, যা পরবর্তীতে শিক্ষার্থীকে ধাপে ধাপে ফেরত দেওয়া হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি জার্মানি আসার মাত্র দেড় মাসের মাথায় খণ্ডকালীন চাকরি পেয়েছি। পড়াশোনা আর চাকরি এক সঙ্গে অর্থাৎ পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকলে জার্মানি অবশ্যই শিক্ষার্থীদের অন্যতম লক্ষ্যস্থল হওয়া উচিত।

জানা গেছে, বর্তমানে জার্মানিতে অন্তত পাঁচ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের হিসেবে, বাংলাদেশ থেকে কেবল ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষের শীতকালীন সেমিস্টারে ৭৩০ জনের চেয়েও বেশি শিক্ষার্থী জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। তার বছর দুয়েক আগেও এই হার ছিল পাঁচশয়ের মতো। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ৭২ শতাংশ পড়াশোনা করছে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত বিষয়ে।
ভর্তির জন্য বিষয় খুঁজতে যেতে হবে DAAD -এ।
অথবা Staudy in Germanyলিঙ্কে।

আর ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে যেতে হবে এই লিংকে : Uni Assist Germany, এ ছাড়া বাংলায় তথ্য জানার জন্য ঢুঁ মারা যেতে পারে http://bsaagweb.de -এ। তা ছাড়া বিসাগ নামে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপেও রয়েছে প্রচুর তথ্য (BSAAG Germany Facebook)। সেই সঙ্গে যে-কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল অফিসে সরাসরি ইমেইল করেও তথ্য জানা যেতে পারে।

জার্মানিতে দুই ভাষায় পড়াশোনা করা যায় — জার্মান অথবা ইংরেজিতে। মাস্টার্স কোর্সে ইংরেজিতে পড়াশোনার সুযোগ বেশি। আর আন্ডারগ্র্যাডে বেশিরভাগ কোর্সই জার্মান ভাষায়। এজন্য কমপক্ষে বি-২ লেভেলের জার্মান জানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ঢাকার ধানমণ্ডির গ্যেটে ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা চট্টগ্রামের জামালখানে ডি স্প্রাখে’তে জার্মান ভাষার প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া মোবাইল ফোনের অ্যাপের মাধ্যমেও বেসিক জার্মান শেখার সুযোগ আছে। গুগল প্লে থেকে অ্যাপটি (Bangla-German App) ডাউনলোডের লিঙ্ক : Bangla-German App Download Link

একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, জার্মানিতে পড়তে আসার জন্য কোনো রকম এজেন্সির দ্বারস্থ হওয়ার কোনোই প্রয়োজন নেই। কারণ কোনো এজেন্সিই ভর্তি কিংবা ভিসার বিষয়ে কোনো সাহায্য করতে পারবে না। জিপিএ ২.৫ হলেও ভর্তির জন্য আবেদন করা যায়। তবে রেজাল্ট যত ভালো হবে ততই ভালো। এতে করে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। [লেখাটি দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত]

মাহমুদ মনি
ডর্টমুন্ড, জার্মানি
৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *